নয়াদিল্লি: চারিদিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে রয়েছে জামা, জুতো। তার মধ্যেই স্বজন হারানো মানুষের হাহাকার ও আর্ত চিৎকারে ভারী হয়ে উঠেছে নয়াদিল্লি স্টেশনের আকাশ-বাতাস। জখম কেউ কেউ তার মধ্যেই খুঁজে চলেছেন নিজের ব্যাগ, মোবাইল।
পূর্ণকুম্ভে পুণ্যস্নানের উদ্দেশে শনিবার রাতে নয়াদিল্লি স্টেশনে এসেছিলেন বহু মানুষ। গন্তব্য প্রয়াগরাজ। তার আগেই পদপিষ্টের ঘটনায় ঝরে গেল ১৫ তরতাজা প্রাণ। এদিনের মর্মান্তিক ঘটনায় মা সিলামকে হারিয়েছেন ২২ বছরের আমন। পড়ে গিয়ে পায়ে গুরুতর চোট লেগেছে বাবারও। তাঁকে জড়িয়ে ধরেই কাঁদতে কাঁদতে আমন বললেন, ‘আমি সকলকে বারণ করেছিলাম। বিশেষ করে মাকে। কতবার বললাম, যেও না। কেউ শুনল না সেই কথা। মা ধাক্কাধাক্কিতে পড়ে গিয়ে আর উঠতে পারেননি। সবাই ওঁর উপর দিয়েই চলে গেল…।’ গলা ধরে আসে আমনের।
ঝাঁসি যাওয়ার ট্রেন ধরার জন্য স্টেশনে এসেছিলেন কমলেশ কুমারী। গুরুগ্রামের বাসিন্দা কমলেশ বলেন, ‘আমি তখন সিঁড়িতে ছিলাম। দেখি সবাই একে অপরকে পিছনে ফেলে এগিয়ে আসার চেষ্টা করছে। বুঝতে পারিনি কী ঘটল।’ কী করবেন বুঝে ওঠার আগেই জিনিসপত্র সহ টাকার ব্যাগ খোওয়া যায় তাঁর। চোখের সামনে পদপিষ্টের মর্মান্তিক দৃশ্য দেখে বিধ্বস্ত দেবযানী সামন্ত। তিনি বলেন, ‘এই পুরো অব্যবস্থার জন্য রেলই দায়ী।’ রাজু খাস্তগীর, রমেশ তিওয়ারিরাও এই ঘটনায় রেলকেই কাঠগড়ায় তুলেছেন। বিহারের ছাপরাতে বাড়ি ফিরছিলেন এক যুবক। তিনি বলেন, ‘আচমকা বহু লোক এসে একে অপরকে ধাক্কা দিতে শুরু করে। কোনও পুলিস ছিল না।’
দুর্ঘটনায় জখমদের উদ্ধার করে নিয়ে আসা হয় লোকনায়ক হাসপাতালে। রাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সেখানকার নিরাপত্তা ব্যবস্থাও জোরদার করা হয়। মর্গে কাউকে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। আইটিও থেকে মিন্টো রোড কালীবাড়ি হয়ে নয়াদিল্লি স্টেশনে ঢোকার রাস্তার একটি লেন ব্যারিকেড দিয়ে বন্ধ করে দেয় পুলিস। স্টেশন সংলগ্ন এলাকার রাস্তাগুলিতে বন্ধ করে দেওয়া হয় আলো। যানজটে পাঁচ মিনিটের রাস্তা যেতে সময় লাগে প্রায় আধঘণ্টা। এদিকে, দুর্ঘটনার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই স্টেশন-ওভারব্রিজের সিঁড়িতে পড়ে থাকা জামা-জুতো, জলের বোতল সরানোর কাজ শুরু করে রেল কর্তৃপক্ষ।
