১৫ দিন পর ডোবা থেকে মিলল হারানো কাটা মুন্ডু! দত্তপুকুরে যুবক খুনের নেপথ্যে কোন কারণ?

উত্তর ২৪ পরগনার দত্তপুকুরে গত ৩ ফেব্রুয়ারি হজরত লস্কর নামে এক যুবকের মুন্ডুহীন দেহ উদ্ধার হয়েছিল। তার পর থেকে একে একে চার জনকে গ্রেফতার করা হলেও খুনের রহস্যভেদ করতে পারেনি পুলিশ। শেষমেশ ওই ঘটনার ১৫ দিন পর মঙ্গলবার বামনগাছি স্টেশনসংলগ্ন এক ডোবা থেকে উদ্ধার হল হজরতের কাটা মুন্ডু। সঙ্গে খোলসা হল অপরাধের প্রকৃত কারণটিও!

দত্তপুকুরকাণ্ডে পুলিশের টানা জেরায় আগেই খুনের কথা স্বীকার করে নিয়েছিলেন ধৃতেরা। এর পর মঙ্গলবার সকালে ধৃতদের ঘটনাস্থলে নিয়ে এসে তদন্তকারীরা ঘটনার পুনর্নির্মাণ করেন। ধৃতেরা জানান, যুবককে খুনের পর তাঁর মাথাটি কেটে ঘটনাস্থল থেকে প্রায় দুই কিলোমিটার দূরের এক ডোবায় ফেলে দিয়েছিলেন তাঁরা। সেই সূত্র ধরেই বামনগাছি স্টেশন-সংলগ্ন ওই ডোবায় তল্লাশি শুরু করে পুলিশের বিশেষ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত দল। শেষমেশ ওই ডোবা থেকেই নিহতের কাটা মুন্ডুটি উদ্ধার করা হয়। সঙ্গে জানা গিয়েছে, খুনের পর হজরতের মোবাইলটি পাশের আর এক ডোবায় ফেলে দিয়েছিলেন মূল অভিযুক্ত জলিলের স্ত্রী সুফিয়া খাতুন। সেটিরও খোঁজ চলছে।

পাশাপাশি, পুলিশ সূত্রে জানানো হয়েছে, ওই ঘটনার তদন্তে উঠে এসেছে নয়া তথ্য। জানা গিয়েছে, নিহত হজরতের সঙ্গে সুফিয়ার বিবাহবহির্ভূত সম্পর্ক ছিল। সুফিয়া ও জলিলের বামনগাছির বাড়িতে নিয়মিত যাতায়াত ছিল দক্ষিণ ২৪ পরগনার লক্ষ্মীকান্তপুরের বাসিন্দা হজরতের। খুনের আগের রাতেও হজরত সুফিয়াদের বাড়িতে এসেছিলেন। জলিলকে জেরায় জানা গিয়েছে, স্ত্রী সুফিয়ার সঙ্গে হজরতের যৌনসম্পর্ক মেনে নিতে পারেননি তিনি। পরবর্তী কালে সম্পর্কে আপত্তি জানাতে শুরু করেছিলেন সুফিয়াও। কিন্তু হজরত শোনেননি। তা ছাড়া, সুফিয়াকে শারীরিক অত্যাচারও করতেন হজরত। এর পরেই স্বামী-স্ত্রী দু’জনে মিলে হজরতকে খুনের পরিকল্পনা করেন। পুলিশ জানতে পেরেছে, খুন ও তার পরবর্তী প্রমাণ লোপাটের গোটা ঘটনায় স্বামীকে সাহায্য করেছিলেন সুফিয়াও। স্ত্রীর উপর যৌন নির্যাতন চালাতেন বলে খুনের পর হজরতের যৌনাঙ্গও কেটে দিয়েছিলেন জলিল।

গত ৩ ফেব্রুয়ারি দত্তপুকুর থানার ছোট জাগুলিয়ার মালিয়াকুর বাজিতপুর এলাকার একটি ফাঁকা জমিতে ওই যুবকের মুন্ডুহীন দেহ দেখতে পান কৃষকেরা। জমির পাশে পড়ে ছিল দেহটি। মৃতের হাত-পা বাঁধা ছিল। উপড়ে নেওয়া হয়েছিল যৌনাঙ্গ। শুরু হয় কাটা মুন্ডুর খোঁজ। তার জন্য বিভিন্ন জায়গায় তল্লাশি চালানো হয়। খালে ডুবুরিও নামানো হয়। মৃতের বাম হাতে দুটো উল্কি ছিল। একটি ‘লভ সাইন’ এবং আর একটিতে ইংরেজি হরফে লেখা ‘বি’। শেষ পর্যন্ত ওই উল্কির সূত্র ধরেই যুবকের নাম-পরিচয় জানা যায়। এর পর গত ১২ ফেব্রুয়ারি উত্তর ভারতের জম্মু থেকে মূল অভিযুক্ত জলিলকে গ্রেফতার করে বারাসত থানার পুলিশ। সঙ্গে গ্রেফতার হন জলিলের স্ত্রী সুফিয়া খাতুন, হজরতের মামাতো ভাই ওবায়দুল গাজি এবং গাজির স্ত্রী পূজা দাস। ধৃতদের জেরার পর জানা গিয়েছিল, হজরত, ওবায়দুল এবং জলিল— এঁরা সকলেই পেশাদার চোর ছিলেন। সম্প্রতি চুরির মালের ভাগবাঁটোয়ারা নিয়েও বচসা হয়েছিল তিন জনের। এ ছাড়াও, সাম্প্রতিক আরও নানা ঘটনায় হজরতের সঙ্গে ক্রমেই দূরত্ব বাড়ছিল তাঁর অন্য সহযোগীদের। ফলে সে কারণেই তাঁকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে কি না, তা-ও খতিয়ে দেখছে পুলিশ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back To Top